কোয়ান্টাম ১০
দুই দুয়ারি
১।
সেই আঠারোশ সালের কথা।
দিকে দিকে তখন ইংল্যান্ডের জয়জয়কার। জাহাজ ভাসিয়ে তারা নতুন নতুন দেশ দখল করছে। প্রবল শত্রুকে হারিয়ে দিচ্ছে ভয়াবহ সব যুদ্ধে। তলোয়ারের ঝনঝনানি আর কামানের গোলায় আগুন লাগছে চারদিক।
এখন রাত গভীর। আশেপাশে সবাই ঘুমিয়ে। সুদূর ভারতবর্ষে যুদ্ধের দামামা বাজছে, আফ্রিকাতে আগুন জ্বলছে, তার ছিটাফোঁটা এখানে আসে নি। লন্ডন শহরে সবাই যখন গভীর ঘুমে, একাকি ল্যাবে জেগে আছে টমাস ইয়াং। দূরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ল্যাবের অল্প পাওয়ারের উইক ল্যাম্পটা মিটিমিটি আলো দিচ্ছে। ওই আলোতে খেয়াল করলে দেখা যাবে ইয়াংএর চোখদুটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আরও একটু খেয়াল করলে বোঝা যাবে ইয়াং কাঁপছে, থরথর করে কাঁপছে। বিশাল একটা যুদ্ধ জয় করে ব্রিটিশ সেনাপতির যেই উত্তেজনা হয়, একই উত্তেজনা হচ্ছে তার মধ্যে।
টমাস ইয়াং নিউটনের সূত্রকে ভুল প্রমাণিত করেছে।
নিউটন ভুল বলেছেন। ইয়াং ঠিক বলেছেন।
টমাস ইয়াং স্যার আইজ্যাক নিউটনকে ভুল প্রমাণ করেছেন। আলো কণা নয়, তরঙ্গ। আলো ইন্টারফিয়ার করে। কণা কখনো ইন্টারফিয়ার করে না।
টমাস ইয়াংএর চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। গোটা লন্ডনবাসিকে জাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।
নিউটন ভুল বলেছে।
ইয়াং ঠিক বলেছে।
স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র ভুল!
আমরা এই ফাকে ইন্টারফিয়ারেন্সএর গল্পটা শুনে আসি। যারা অঙ্ক ভয় পান, স্কিপ করেন।
২।
আগের পর্বে তরঙ্গ চিনিয়েছিলাম মনে আছে?
মনে করি, একটা তরঙ্গ X অক্ষ বরাবর যাচ্ছে।
তার অংশগুলোর উচ্চতা যথাক্রমে
0 1 2 3 2 1 0 -1 -2 -3 -2 -1 0
এই তরঙ্গের বিস্তার 3.
প্রথম পজিশনে তরঙ্গের উচ্চতা 0.
3 * sin 0 ডিগ্রির মান হলো 0. আমরা বলি, প্রথম পজিশনে তরঙ্গটার ফেজ (দশা) 0.
আস্তে আস্তে কোন বাড়তে থাকবে। বাড়তে থাকবে sin theta র মান।
sin এর সর্বোচ্চ মাণ হলো 1. sin 90 ডিগ্রির মাণ হলো 1. 3 sin 90 ডিগ্রির মাণ হলো 3.
চার নম্বর পজিশনে তরঙ্গের উচ্চতা বাড়তে বাড়তে 0 থেকে তিন হয়েছে। সেখানে তার ফেজ হলো 90 ডিগ্রি।
এরপর আবার উচ্চতা কমবে। ফেজ বাড়তে থাকবে।
ক্লিয়ার?
একটু রেস্ট নেই।
…
…
…
ডান।
৩।
এইবার ভাবি, X অক্ষ বরাবর দুইটা তরঙ্গ যাচ্ছে।
মনে করি:
এক নাম্বার তরঙ্গ আর দুই নাম্বার তরঙ্গের ফেজ ডিফারেন্স 0.
এক নাম্বার তরঙ্গের উচ্চতা যেখানে 0, দুই নাম্বার তরঙ্গেরও উচ্চতা 0 ।
এক নাম্বার তরঙ্গের উচ্চতা যেখানে 1 , দুই নাম্বার তরঙ্গেরও উচ্চতা 1 ।
এক নাম্বার তরঙ্গ যদি হয়
0 1 2 3 2 1 0 -1 -2 …
দুই নাম্বার তরঙ্গও হবে
0 1 2 3 2 1 0 -1 -2
প্রতিটা পয়েন্টে দুইটা তরঙ্গ যোগ হবে।
(0 + 0) = 0
(1 + 1) = 2
(2 + 2) = 4
যোগ হয়ে নতুন তরঙ্গের চেহারা হবে
0 2 4 6 4 2 0 -2 -4 -6 ….
এই টাইপের ইন্টারফিয়ারেন্সের নাম কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফিয়ারেন্স। গঠনমূলক ব্যাতিচার।
ফেজ ডিফারেন্স 0 না হয়ে ১৮০ ডিগ্রি হলে কি হবে?
এক নাম্বারঃ
0 1 2 3 2 1 0 -1 -2 -3 …
দুই নাম্বারঃ
0 -1 -2 -3 -2 -1 0 1 2 3 …
(0 + 0) = 0
(1 – 1) = 0
(2 – 2) = 0
(3 – 3) = 0
নতুন তরঙ্গ হবেঃ
0 0 0 0 0 0 …
এর নাম ডেস্ট্রাক্টিভ ইন্টারফয়ারেন্স। ধ্বংসাত্মক ব্যাতিচার।
ফেজ ডিফারেন্স যদি অন্য কিছু হয়? ১০ ডিগ্রি হয়? ২০ ডিগ্রি হয়? ৯০ ডিগ্রি হয়?
আর বলব না। পাঠকরা বের করবেন।
৪।
টমাস ইয়াং দাড়িয়ে আছেন একটা দেয়ালের সামনে। দেয়ালের গায়ে দুইটা খুব সূক্ষ্ম দরজা। দুইটা চির। আলো পেছনের লাইট থেকে বের হচ্ছে। দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুই পথে যাচ্ছে।
দরজার ওপাশে আরেকটা দেওয়াল। ওখানে আলো ছায়া খেলা করছে। যে জায়গায় একই ফেজে আলো পড়ছে ওখানে দিগুণ উজ্জ্বল হচ্ছে আলো। যে জায়গায় ১৮০ ডিগ্রি ফেজ ডিফারেন্সে আলো পড়ছে সেখানে ধ্বংস হচ্ছে আলো।
কি সুন্দর ইন্টারফিয়ারেন্স প্যাটার্ন! আলো ডেফিনিটলি একটা তরঙ্গ। কণা এই জিনিস করতে পারতো না।
৫।
আইনস্টাইন স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সমুদ্রের সামনে। আটলান্টিক মহাসাগর। কি সুন্দর ঢেউগুলো উঠছে নামছে! ইন্টারফিয়ার করছে। শব্দ করে ভাংছে পায়ের কাছে।
হঠাত সিনটা চেঞ্জ হয়ে গেল। সামনে সমুদ্র গায়েব। পানির ঢেউ গায়েব। ছুটে আসছে বিরাট বিরাট নীল নীল কামানের গোলা!
আইনস্টাইন গোলা খেয়ে পড়ে গেলেন।
পাশ থেকে নিলস বোর হাসতে হাসতে বলল, বলেছিলাম না, আলো কখনো তরঙ্গ কখনো কণা!
(চলবে)
Shakil
Nyc
ইমামুল হাসান
😲😲