ট্রায়াসিক



ট্রায়াসিক

১।
বিশাল বড় মহাদেশ প্যাঞ্জিয়ায় ভাঙ্গন ধরেছে।
উত্তরে দেখা দিয়েছে নতুন মহাদেশ, লরেশিয়া।
দক্ষিণে গন্ডোয়ানা।
মাঝখানে তার টেথিস সাগর।
পার্মিয়ান ধ্বংসযজ্ঞের কোটি কোটি মৃত লাশের কবরস্থানে কেটে গেছে রাতের আঁধার।
ধূলি ধূসরিত উশর পৃথিবীতে এসেছে নতুন যুগ: ট্রায়াসিক, Age of Sandstones.

২।
উদ্ভট পরিবেশ। একটানা বেশ কয়েকদিন শুকনা আবহাওয়ার পর গতরাতে ঝড় এসেছিল হঠাত করে। বিলজির দমকে চমকে চমকে উঠেছিল চারদিক।

এদিকে মাছের সাপ্লাইও শেষ হয়ে গেছে। আজকে ওয়েট করলে না খেয়ে থাকতে হবে। সাহসে ভর করে ছোট স্পিডবোটটাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন সমুদ্রে।

ভোর সকাল। রাতভর ঝড়ের পর চারদিক যেন থমথম করছে। সব নিশ্চুপ। মনটা কু ডাক ডাকছে। আজকে না বের হলেই বা কি হতো!
ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে টেথিস সাগরে। বেশিদূর দেখা যায় না। আপনি মাছ ধরতে মগ্ন। না হলে ৭০ ফুট লম্বা কালো ছায়াটা যখন বহুদূরে দেখা গিয়েছিল তখনই ইউ টার্ন নিতে পারতেন।
যখন টের পেলেন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ডলফিনের মতো চেহারার, সামনে করাত মাছের মতো লম্বা একটা চোয়াল নিয়ে ইকথাইওসর শনিসরাস চলে এসেছে ২০০ ফুটের মধ্যে। একটা ৭ তলা বিল্ডিঙকে উল্টো করে শোয়ালে যত বড় হয়, শনিসরাস প্রায় সেই সাইজের। ২টা স্পার্ম তিমির সমান ওজন, হা করা মুখে দাঁতগুলো ঝকঝক করছে। মাছ ধরছে শনিসরাস। আপনার কপালে আজকে শনি আছে।

জন্তুটা আপনাকে ভালভাবে খেয়াল করার আগেই ইউটার্ন নিলেন। শনিসরাস বেশি স্পিডে নড়তে পারে না। ভাগ্য ভালো থাকলে তীরে ফিরতে পারবেন।

দূরত্ব বাড়ছে। আজকে হয়তো বেঁচে যাবেন। হঠাত বিদ্যুতের শিখা চমকে উঠল আকাশে। ঝকমক করে উঠল স্পিডবোটের মেটালিক বডি।

ঘুরে সামনে বাড়ল শনিসরাস। সাইজ দিয়ে পুষিয়ে নিবে স্পিডের ঘাটতি …

৩।
ধরমর করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আপনার। দরদর করে ঘামছেন। ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে একটু শান্ত হলেন। ভয়ের কিছু নেই। বিশাল ফড়িং গুলো নাই। ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝি ঝি পোকা নামের নতুন একজাতের পোকার জন্ম হয়েছে, জঙ্গল মাতাল করে রেখেছে এরা।

মাছ আসলেই শেষ, কিন্তু ওই স্বপ্নের পর আর সাগরে যেতে ইচ্ছা করলো না। ছোট ছোট ইঁদুরের মতো এজস্ট্রডন আছে এলাকায়, ২ ১টাকে ধরে আজকের মতো চলা যাবে। আবার এদের ধরতে ভয়ও লাগে, পৃথিবীর একেবারে প্রথম দিকের সত্যিকারের ম্যামাল, মারতে গেলে যদি স্পেস টাইম উলটা পালটা হয়ে যায়!

৪ ।
এই জঙ্গলটা ভালো, সব জঙ্গল ভালো নয়।

আর্কোসরের বংশধররা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। ট্রায়াসিকের শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য যা যা দরকার সব আছে এদের।

পর্যাপ্ত খাবার, প্রচুর জায়গা পেয়ে আকারে বড় হয়ে উঠছে তারা।

কোন কোন জলাভূমির তীরে পস্টোসুচাসের গল্প শোনা যায়। ১৫ ফুট লম্বা এই কুমিরগুলোর ধারে কাছে ঘেঁসে না কেউ।

মাঝে মাঝে আকাশে বাদুরের মতো কি জানি উড়তে দেখা যায়। ৩ ফুট চওড়া পাখা, খুব বেশি ডেঞ্জারাস না।

পাশের মরুভূমিতে ইউর‍্যাপ্টরের গল্প শোনা গেছে। ৩ফুট লম্বা, গিরগিটির মতো। আপনার টাইম ট্র্যাভেলার ফ্রেন্ডের তাঁবু থেকে মাছ চুরি করতে যেয়ে ধরা পরেছিল সেদিন।

ওরা বড় হচ্ছে। সামনে আসছে ডাইনোসরের যুগ।

Leave a Reply