গভীর সমুদ্রে ৭: বৌয়ের আচল তলে



গভীর সমুদ্রে ৭
বৌয়ের আচল তলে

গত পর্বে মা নিয়ে লিখেছিলাম, এই পর্বে লিখছি বৌ নিয়ে।

গভীর সমুদ্রে যে জায়গাটায় এক ফোটাও সূর্যের আলো পৌঁছে না তার নাম মিডনাইট জোন। সেখানে অসহ্য চাপ, মানুষের হাড্ডি গুড়া গুড়া করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট। সেখানে যেতে হলে আপনাকে চড়তে হবে খুব শক্ত পোক্ত একটা সাবমারসিবলে। আজকে সাবমারসিবলের গল্প বলতে ইচ্ছা করছে না, আজকে আমরা দেখে আসবো তার জানালা দিয়ে যেসব ভয়ঙ্কর দানবদের দেখা যায় তাদের একজনকে।

মিডনাইট জোনে ঘুটঘুটা অন্ধকার, সেই অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে বায়োলুনিস্যান্ট প্রাণীদের আলো। বিরাট বিরাট হেডলাইট জ্বালিয়ে মাছের দল সেখানে চষে বেড়াচ্ছে শিকারের খোঁজে। জেলিফিশ সেখানে ঝাড়বাতির মতো, তীব্র আলোর ঝলক দেখিয়ে পালাচ্ছে শিকারির চোয়াল থেকে। ভ্যাম্পায়ার স্কুইডের রক্তলাল কাঁটাওয়ালা বাহুগুলো থেকে ঝিলিক মারছে উজ্জ্বল নীল আলো।

এই অদ্ভুত দুনিয়ায় কিছু আলোকে দেখা যাবে যেগুলো একেবারে নড়াচড়া করছে না, চুপ করে বসে আছে টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্পের মতো। এদের ব্যাপারে সাবধান, আপনার বই পড়ার সুবিধার জন্য কেউ এমনি এমনি গভীর সমুদ্রে আলো জ্বেলে রাখবে না। বোকাসোকা মাছরা অতশত বুঝে না, সহজ নিরীহ শিকার মনে করে পিছু নেয় ওই আলোয়। তখন আলোর আসল চেহারা বের হয়ে আসে।

মানুষ যেমন বড়শির মাথায় কেঁচো গেঁথে মাছ ধরে, দানবীয় অ্যাংলার ফিশের নাকের ডগায় আছে তেমনি এক বড়শি। বড়শির মাথায় বাস করে অ্যাংলার ফিশের পোষা ব্যাকটেরিয়ারা। তারা আলো জ্বেলে বসে থাকে, অ্যাংলার ফিশ ওই আলো দেখিয়ে শিকারকে কাছে টানে। তার ভয়ঙ্কর বীভৎস মুখটায় সাড়ি সাড়ি চোখা চোখা দাঁত, তার পেটটা বেলুনের মতো ফুলে নিজের চেয়ে বড় শিকার খেয়ে ফেলতে পারে, আর একেকটার সাইজ কয়েক ইঞ্চি থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। অতএব, মানুষের বাচ্চা, সাবধান!

অ্যাংলার ফিশ নানান জাতের হয়। কোনটার বড়শিটা মশালের মতো, কোনটার সাড়া শরীরে সংবেদনশীল রোম, কোনটা ভুতের মতো সাদা ধবধবা। কিন্তু একটা ব্যাপার প্রায় সবার মধ্যেই কমন। এরা সবাই মেয়ে। বহুদিন পর্যন্ত ছেলে অ্যাংলার ফিশ বিজ্ঞানীদের কাছে বিরাট বড় রহস্যের মতো চিল। শেষ পর্যন্ত তার জট খুলেছে।

অ্যাংলার ফিশদের সমাজ নারীতান্ত্রিক, নারীরা সেখানে ভয়ঙ্কর, রোমহর্ষক, বিশাল। পুরুষরা খুব ছোট, দুর্বল, অপুষ্ট। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য থাকে ভালো দেখে একটা বৌ জোগাড় করে তার আচলের নিচে লুকিয়ে পড়া। পুরুষ অ্যাংলার ফিশের ঘ্রাণশক্তি খুব প্রবল, অন্ধকার ঘুটঘুটে দানবদের রাজ্যে কারো পেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে আপ্রাণ চেষ্টা করে বৌ জোগাড়ের। বৌ যোগার হয়েছে? গুড। ছেলে অ্যাংলার ফিশ এবার বৌয়ের শরীর কামড়ে ধরে। সাড়া জীবনের মতো কামড়, একেবারে সুপার গ্লুর মতো বন্ধন। আস্তে আস্তে তার ঠোঁট গলে যায়। তারপর মুখ চোখ। তার আর কোনদিন খাবার প্রয়োজন হবে না। বৌয়ের রক্তনালী থেকে আসা খাদ্য তাকে পুষ্টি জোগাবে। পাখনার আর দরকার নেই। বহু অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আর দরকার নেই। সেগুলোও আস্তে আস্তে পচে যায়। শেষ পর্যন্ত দুইটা মাছ এক হয়ে যায়, বিশাল একটা মেয়ে মাছের সাথে লাগানো পুরোপুরি ডিডিকেটেড, অসহায় তার স্বামী, শেষ পর্যন্ত যে কিনা ছোট হতে হতে হয়ে যাবে একটা শুক্রাণুর থলি, তারপর হারিয়ে যাবে একদিন।

নিষ্ঠুর অ্যাংলার ফিশ একদিকে যেমন ব্যাকটেরিয়া পোষে শিকার ধরার জন্য, আরেকদিকে স্বামীও পোষে প্রজননের জন্য। একটা না, কয়েকটা!

One thought on “গভীর সমুদ্রে ৭: বৌয়ের আচল তলে”

Leave a Reply