গভীর সমুদ্রে ৩




গভীর সমুদ্রে – ৩

১।
ট্রিড্যাকনা জাইগাস হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝিনুকের নাম । সমুদ্রের ৫০-৬০ ফুট গভীরে, আলোর রাজ্যে এদের বাস। এদের সাড়ে চারফুট লম্বা বিশাল শরীরটা হাঁটাচলা করতে পারে না। ছোটবেলায় নড়ে চড়ে বেড়ায়, বড় হয়ে গাছের মতো শিকড় গাড়ে প্রবালের ফাঁকে। একেকটার বয়স হয় ১০০ বছরের মতো। আস্তে আস্তে সবুজ শৈবাল জমা হয় তার শরীরে- জায়ান্ট ঝিনুক এই শৈবালদের আশ্রয় যোগায়, বিনিময়ে ঝিনুক পায় শৈবালের সঞ্চিত খাবার।

সমুদ্রের আলোকিত জায়গায় প্রবালদের বসবাস, দিনে সেখানে সূর্যের আলোতে হাজার মাছ খেলা করে, রাতে আলোর ফুলের মতো আলো দেয় প্রবাল আর অ্যানিমোনি। সেই আলোর রাজ্যে চোয়াল ফাঁক করে, কয়েকশ চোখ মেলে ওঁত পেতে তাকে ট্রিড্যাকনা। স্কুইডের চোখ খুবই শক্তিশালী, ঝিনুকের চোখ চরম বাজে – সে শুধু আলোর উজ্জ্বলতা আর নড়াচড়া বুঝতে পারে।

জায়ান্ট ঝিনুক লেজেন্ডারি প্রাণী। তার ২০০ কেজি ওজনের শরীরটা মারাত্মক ভারি, চোয়াল দুটো অসম্ভব শক্তিশালী। সে যদি সত্যি সত্যি আপনার পা কামড়ে ধরে নিজের পা নিজে কেটে বের হওয়া লাগতে পারে, তাই সাবধান। তবে অনেক সময়ই তারা চোয়াল পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে না, আপনার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে খুব বেশি ভয় নেই, ট্রিড্যাকণা অ্যাগ্রেসিভ না।

এমনি এক বিরল, বিচিত্র, বিশাল জায়ান্ট ঝিনুকের পেট থেকে বের হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুক্তা – তার দুইটা নামঃ পার্ল অভ লাও ঝু, আর পার্ল অভ আল্লাহ। উইলবার্ন কব নামের যে আমেরিকান এই অস্বাভাবিক বস্তুটার সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন তিনি এই মুক্তার দুই রকম গল্প শুনিয়েছেন, তাই এর দুইটা নাম। প্রথম গল্প অনুযায়ী, এই জিনিসের আদি মালিক ছিলেন ফিলিপিনো এক মুসলিম ট্রাইবাল চিফ , নবী মুহাম্মাদ (স) এর মাথার পাগড়ির মতো আকার জন্য তিনি এই মুক্তার নাম রেখেছিলেন পার্ল অভ আল্লাহ। এই মুক্তা ছিল তাঁর সন্তানের মতো। চিফ কোন মূল্যেই এই অমূল্য সম্পদ বেচতে রাজি ছিলেন না। পরে কব যখন চিফের ছেলেকে ম্যালেরিয়ার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান, তখন চিফ খুশি হয়ে তাকে ফ্রিতেই মুক্তাটা দিয়ে দেন।

কিছুদিন পর কবের গল্প চেঞ্জ হয়। ফিলিপিনের বদলে মুক্তার জন্মস্থান হয়ে যায় চিন। চলে আসে লাও ঝু নামের সাধুর গল্প, আড়াই হাজার বছর আগে ছোট একটা ঝিনুকের ভেতর জেড পাথর বসিয়ে যিনি এই মুক্তার জন্ম দিয়েছেন, তারপর একসময় তাকে বসিয়েছেন জায়ান্ট ঝিনুকের পেটে। মুক্তার নাম চেঞ্জ হয়ে হয় পার্ল অভ লাও ঝু।

কোন গল্প সত্যি আমরা জানি না। মহামূল্যবান রত্নের সাথে সব সময়ই অনেক গল্প থাকে। পার্ল অভ লাও ঝু আঁকাবাঁকা শেপের, ঠিক রত্নের মতো লাগে না। কিন্তু সে মহামূল্যবান। এর বর্তমান দাম ৩৫ কোটি ডলার থেকে ৯৩ কোটি ডলারের মধ্যে।

এর ওজন ৬.৪ কেজি, ব্যাস ২৪ সেন্টিমিটার।

Leave a Reply