৭ নাম্বার পর্বে বলেছিলাম চার মাত্রিক স্থান কালের ভেতর দিয়ে দুই বিন্দুর সত্যিকারের দূরত্ব হচ্ছে
ds^2 = -dt^2 + dx^2 + dy^2 + dz^2. আজকে তার প্রমাণ দেখে আসি। এই প্রমাণটা বহু জায়গায় পাবা, আমি নিয়েছি হার্টেলের গ্র্যাভিটি বই থেকে।
১.
ধরো দুইটা আয়না L দূরত্বে রাখা আছে। আলোর এই দূরত্ব যেতে আসতে সময় লাগে Δt. তাহলে,
Δt = 2L/c —– (1)
এইবার ধরো, এই দুই আয়নার সমান্তরালে বক্কর ভাই অনেক বেগে উড়ে গেলো।
বক্কর ভাই ডান থেকে v বেগে যাচ্ছেন।
তার মানে তার সাপেক্ষে আয়নাও উল্টা দিকে v বেগে গেলো।
তার মানে তার সাপেক্ষে আলোর বেগ হওয়া উচিত ছিল
X অক্ষ বরাবর v
Y অক্ষ বরাবর c
মোট √(v^2 + c^2)
কিন্তু এটা অসম্ভব। আলোর মোট বেগ সব সময় c হবে, বারবে না, কমবেও না।
বেগ স্থির থাকতে হলে বক্কর ভাইয়ের কাছে এখন দূরত্ব আর সময় চেঞ্জ হয়ে যাবে।
আলো যেয়ে ফিরে আসার মাঝখানের সময়টা বক্কর ভাই এখন দেখবেন Δt’
এই Δt’ সময়ে আলো X অক্ষ বরাবর যাবে Δx’ = vΔt’ পরিমান। Y অক্ষ বরাবর আগের মতোই L দূরত্ব যেয়ে ফিরে আসবে।
তার মানে, এর অর্ধেক সময়, অর্থাৎ Δt’/2 তে আলো যাবে X অক্ষ বরাবর Δx’/2, Y অক্ষ বরাবর L. তার মোট দূরত্ব হবে,
√(L^2 + (Δx’/2)^2)
তাহলে,
c Δt’/2 = √(L^2 + (Δx’/2)^2)
বা,
Δt’= (2/c) *√(L^2 + (Δx’/2)^2) —— (2)
তার মানে, যে দুইটা ঘটনার সময়ের পার্থক্য দুই আয়নার মাঝখানে দাড়ানো বকরিনা আপু দেখবেন Δt, ওই একই দুইটা ঘটনার পার্থক্য পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া বক্কর ভাই হয়তো দেখবেন Δt’.
ইন্টারের বইয়ে লরেঞ্জ রূপান্তরের সূত্রগুলো আছে, এখান থেকে খুব সহজে সেগুলো ডেরাইভ করা যায়। একটু ভেবে দেখো তো, ধরো Δt = 1 সেকেন্ড, এই এক সেকেন্ডে বক্রিনা আপু একটা হাঁচি দিলেন। ঠিক কোন বেগে গেলে বক্কর ভাই আপুর এই হাঁচিটাকে সাড়া জীবন (৭০ বছর) ধরে দেখবেন?
২.
আমরা দেখলাম, বক্কর ভাই আর আপুর সময় আসলে এক না। বইয়ে আরও বড় করে লেখবো, তখন দেখা যাবে একটা লাঠির দৈর্ঘ্য আপু যা মাপবেন, বক্কর ভাই তার চেয়ে অনেক কম মাপবেন। দূরত্বও দুইজনের ক্ষেত্রে আলাদা।
কিন্তু খেয়াল করো,
-(cΔt’)^2 + (Δx’)^2
= -4[L^2 + (Δx’/2)^2] + (Δx’)^2
= -4L^2
= -(cΔt)^2
= -(cΔt)^2 + (Δx)^2, যেখানে Δx = 0
এই যে জিনিসটা, যেটা দুইজনের ক্ষেত্রেই সমান, এর নাম দেওয়া হয়েছে Δs, স্পেস টাইমের ভেতর দিয়ে সত্যিকারের দূরত্ব। কেন এমন নাম সে কথায় পরে আসছি, আগে চিহ্নটাকে খুব ভালো করে চিনে নেই।
আমাদের উদাহরণে Y Z অক্ষ বরাবর কেউ নড়াচড়া করছে না। যদি করতো তাহলে Δs এর জেনারেল রূপ হতো:
Δs^2 = -(cΔt)^2 + (Δx)^2 + (Δy)^2 +(Δz)^2
= -(cΔt’)^2 + (Δx’)^2 + (Δy’)^2 +(Δz’)^2
গ্রিক লেটারের চেয়ে ইংলিশ লেটারের মাঝে মাঝে দাম বেশি হয়, ক্যালকুলাস ওয়ালারা সূক্ষ্ম হিসাবের জন্য ডেল্টার বদলে d লিখতে পছন্দ করেন। এদিকে, আলোর বেগকে ১ একক ধরা খুব ভালো অভ্যাস (দূরত্বের একক আলোক সেকেন্ড নিলেই হয়), রিলেটিভিস্টরা প্রায়ই করেন। তখন c হয়ে যায় 1. এসব বসিয়ে আগের সমীকরণ থেকে পাই,
ds^2 = -dt^2 + dx^2 + dy^2 + dz^2
= -dt’^2 + dx’^2 + dy’^2 + dz’^2
৩.
তো, আমাদের সূত্র প্রমাণিত। চতুর্মাত্রিক স্থান কাল ব্যবস্থায় যেকোন দুই বিন্দুর মধ্যে দূরত্বের সূত্র আমরা পেয়ে গেছি, নাম দিয়েছি ds. সবাই হ্যাপি?
কারো মনে একবারও কি প্রশ্ন এসেছে এই ds আসলে কি মিন করে? এটা নিয়ে এত লাফানোর কি আছে?
কেনই বা হুট করে হাবিজাবি যোগ বিয়োগ করে একটা চিহ্ন নিয়ে এসে সেটার নাম দিলাম স্পেস টাইমের ভেতর সত্যিকারের দূরত্ব? দূরত্বের কি আছে এখানে?
ভাবো। বাঁচতে হলে ভাবতে হবে।