ডি আই ডি: টুকরো টুকরো আত্মার গল্প



ডি আই ডি: টুকরো টুকরো আত্মার গল্প

“প্রথমে তোমার আত্মাটাকে টুকরা করতে হবে, তারপর ওই টুকরাটাকে লুকাতে হবে শরীরের বাইরে, কোন একটা জিনিসের ভিতর। এরপর যদি তুমি মারাও যাও, আত্মার ওই টুকরাটা বেঁচে থাকবে … ”
প্রফেসর স্লাগহর্ন, হ্যারি পটার

১।
প্যাট্রিসিয়ার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। হাসিখুশি, অমায়িক মহিলা। তার ১৪ বছর বয়সের একটা মেয়ে আছে। বাসায় অনেকগুলো পোষা কুকুর আছে। খুব সুন্দর একটা সাজানো বাসা আছে।

প্যাট্রিসিয়া মেয়ের মা। তার যে একটা মেয়ে আছে সে অনেকদিন জানত না। কিম আর অন্যান্যরা ব্যাপারটা তার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল। কখন সে প্রেগন্যান্ট হলো, কখন মেয়ের জন্ম হলো তার কিছু মনে নেই।

প্যাট্রিসিয়া সাধারণ মানুষ নয়।

আপনার আমার মতো স্বাভাবিকভাবে প্যাট্রিসিয়ার জন্ম হয় নি। তার জন্ম হয়ে কিম নবেলের শরীরে। কিমের বয়স যখন ত্রিশের  কাছাকাছি তখন প্যাট্রিসিয়ার জন্ম।

প্যাট্রিসিয়ার কোন শৈশব নেই। শৈশবটা কিমের। শৈশবের ভয়াবহ দুঃস্বপ্নগুলো প্যাট্রিসিয়াকে মনে রাখতে হয় নি।

শিশুর জন্মের সময় তাকে গর্ভে ধরেছিল ডন। মেয়ের জন্মের পরপরই ডন চলে যায়। অ্যামির বাবা শিশুকন্যাকে অস্বীকার করা শুরু করে। সেই সময় কোর্টে লড়েছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী হেইলি আর ড্যাশিং টিশটাশ বনি। তখনও প্যাট্রিসিয়ার খুব একটা প্রয়োজন পরে নি।

২।
কিমের বয়স তখন বিশ। পেশায় ভ্যান ড্রাইভার। নেশায় আর্টিস্ট। একদিন ভ্যান চালানোর সময় হঠাত করেই জুলির জন্ম হয়। জুলি হতভম্ব হয়ে দেখতে পায় সে একটা ভ্যানে, কিভাবে কোথা  থেকে আসলো তার কিচ্ছু মনে নেই।
জুলি ধাক্কা লাগায় অনেকগুলো গাড়ির সাথে।

৩।
রেবেকার জীবনটা অর্থহীন। সে নিজেকে মেরে ফেলতে চায়। মারতে চায় কিমকে। নিজের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দিতে চেয়েছিল।  কিম ঠিক সময়ে জেগে উঠে কোনরকমে বাঁচতে পেরেছিল।

হেইলির মনটা নোংরা। সে জড়িয়ে পরে শিশুকামিদের দলে। কিম টের পেয়ে যায়। পুলিশে খবর দিতে যায়। শুরু হয় তার উপর হুমকি ধামকি, থ্রেট লেটার।

প্যাট্রিসিয়া ভালোই আছে। আগুনের স্মৃতি, অ্যাসিডের স্মৃতি কিছুই তার মনে নেই। সে সুখি মানুষ।

৪।
কিম একটা শরীর। একটা ব্রেইন। সেখানে অনেকগুলো মানুষ বাস করে। তারা সকালে বিকালে আসে,  যায়। কিমের জীবনটা অনেকগুলো স্মৃতিহীনতার একটা চোরাবালি মাত্র।

এই সিন্ড্রোমের নাম  ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিজর্ডার। D.I.D. শৈশবে ভয়াবহ অত্যাচার যারা সহ্য করে, তাদের ব্রেইন নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেকগুলো পার্সনালিটিতে টুকরা হয়ে যায়। কেউ হয়তো ছেলে, কেউ মেয়ে। কারো মনে আছে ওই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা, কারো মনে নেই। কেউ খুব ভালমানুষ, কেউ নরপিশাচ, শৈশবের ভয়াবহ স্মৃতিগুলো তার বিবেককে ধ্বংস করেছে। একেকজন হয়তো একেক বয়সে আটকে আছে।

কেউ ১৬ বছর বয়সী টম রিডেল, কেউ সত্তরের লর্ড ভল্ডিমর্ট।
হরক্রাক্সের মতো।

এক দেহ, অনেক আত্মা।

One thought on “ডি আই ডি: টুকরো টুকরো আত্মার গল্প”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *