শিকার ৩
কল্পবিজ্ঞান
রহিমার মা এর সিকোয়েল
আগের পর্বগুলো : https://nayeem.science/category/science-fiction/rahimas-mother/
১।
প্রবল বৃষ্টির সাথে নামলো ঝড়।
গুমগুম অশিরিরি শব্দে কেঁপে উঠলো চারপাশ।
অর্বাচিন চাকমা একমাত্র চাদরটা ভাইপোর গায়ে দিয়ে নিজে ডালপালার আড়ালে বসে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলেন।
আবার একটু একটু করে ভয় ভয় ভাবটা তাঁর মধ্যে ফিরে এলো।
গায়ে যে বৃষ্টির ফোটাগুলো পড়ছে সেগুলো ঠিক স্বাভাবিক ঠেকছে না।
কেমন যেন ভারি।
আঠালো।
পিচ্ছিল।
বাতাসের শো শো শব্দটাকে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। মনে হচ্ছে ওটা ঠিক বাতাস না। কোন একটা আহত জন্তু গোঙাচ্ছে।
উপরে আকাশ জুড়ে জেঁকে বসেছে ঘন কালো মেঘটা। মেঘ কখনো এতো ঘন হয়?
ওটা কি আসলেই মেঘ না অন্য কিছু?
হঠাত বেলিফুলের তীব্র গন্ধে ভরে গেল চারদিক। ভয় বাড়তে বাড়তে আতঙ্কে রূপ নিলো। তীব্র আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে অর্বাচীন চাকমা জ্ঞান হারালেন।

২।
স্বপ্ন শুরু হলো।
উদ্ভট সব স্বপ্ন।
দুইজন শক্তিশালী লোক একটা মহিলাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
তাও ধরে রাখতে পারছে না।
মহিলার তীব্র আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। সে বারবার বিলাপ করে তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বলছে।
আশেপাশে লোকজন পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না।
সাড়া গায়ে নানান ধরণের উল্কি আঁকা পুরোহিত গোছের একজন একমনে আগুনের সামনে বসে মন্ত্র পড়ছিলেন। মহিলার চিৎকারে বিরক্ত হয়ে তিনি চোখ মেলে তাকালেন। ইশারা করলেন।
মহিলাকে দূরে দিয়ে যাওয়া হলো।
…
…
…
আগুনের উপর হাঁড়িতে যে জিনিসটা ফুটছিল সেটা রেডি হয়েছে। পুরোহিত সেটা একটা বাটিতে ভরে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছেন।
পাশে একটা ছোট ছেলেকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
পুরোহিত মন্ত্র পড়া শেষ হলে বাটিটা একজনের হাতে দিলেন। সেবিকা বাটিটা নিয়ে ছেলেটাকে খাওয়াতে গেলো।
জোড় করা লাগলো না। ছেলেটা নিজে আগ্রহ করে খাবারটা খেলো। সুন্দর একটা গন্ধে ভরে গেল চারপাশ।
…
…
…
গভীর রাত।
মন্দিরের বারান্দায় ছেলেটাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
আগে খেয়ে দেয়ে সে বেশ শান্ত হয়ে ছিল। এখন কাঁদছে।
মন্দিরের আগুণ নিভে গেছে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে মুশলধারে।
ওই বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে ছোট শিশুর কান্না ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।
ভয়ঙ্কর কিছু একটা আসছে। বাইরে সরসর শব্দ হচ্ছে।
…
…
…
ভোরবেলা।
মন্দির থেকে কিছুটা দূরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।
অনেক মানুষ একসাথে হয়ে গর্ত খুঁড়ছে।
শাবলের শব্দ হচ্ছে থ্যাপ থ্যাপ।
একটু দূরে পুরোহিত তাকিয়ে কাজ দেখছেন।
তাঁর চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে।
শ্রমিকদের একজন গর্ত থেকে উঠে আসলো। দুঃসংবাদটা শোনালো।
জিনিসটা পাওয়া যায় নি।
পুরোহিতের সৌম্য চেহারাটা থমথমে হয়ে গেলো।
আশেপাশের পুরুষরা পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আরও একটা বাচ্চা লাগবে। আজকে কার সন্তানের পালা?
৩।
ঘামে ভিজে ঘুম ভাঙল অর্বাচিন চাকমার।
বৃষ্টি থেমে গেছে।
ভোর হয়েছে।
তারপরও পাখি ডাকছে না। চারপাশ কেমন থমথমে হয়ে আছে।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তিনি চারপাশে তাকালেন।
তাঁর মুখ দিয়ে আতঙ্কে একটা চিৎকার বের হয়ে আসলো।
তাঁর পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে একটা মাংস শুন্য কঙ্কাল।
(চলবে)
শিমুল
দারুণ হচ্ছে! পরের পর্ব লিখেন প্লিজ!