রহিমার মা
(কল্পবিজ্ঞান)
১।
“কেমন আছো বাজান?
সইল স্বাস্থ্য ভালা তো? খালি তো চাকরি চাকরি করো, পোলাটার খবর রাখস একডু?
পোলাডা শুকায় একবারে কাঠি হইয়া গেসে। পোলাডার কথা ভাইবা এই হরলিক্সের ডিব্বাটা পাঠাইলাম। দুই বেলা খাইতে দিও।
ইতি,
রহিমার মা”
আকবর সাহেব চিঠিটা আবার পড়লেন। মানিকগঞ্জের কোন এক গ্রাম থেকে এসেছে। হাতের লেখা অস্পষ্ট, প্রচুর বানান ভুল। বুঝাই যায় লেখিকা বেশি লেখাপড়া জানেন না।
রহিমার মা নামে তাঁর পরিচিত কোন আত্মীয় স্বজন নেই। শাহানাকে চিঠিটা দেখিয়েছিলেন, সেও চিনতে পারে নি। হরলিক্সের কৌটাটা ফেরত দিতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারা খোঁজ নিয়ে বলল, প্রেরক ফোন নাম্বার ভুল দিয়েছে, মাল ফেরত পাঠানো যাবে না।
আকবর সাহেবের একটু একটু খারাপ লাগছে। কোথাকার কোন অপরিচিত বৃদ্ধা, হয়তো শহরে তার ছেলে মেয়ে বা আত্মীয় স্বজন থাকে, অনেক শখ করে একটা হরলিক্সের কৌটা পাঠিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ওরা হরলিক্সটা পেলো না।
আরেকটা ব্যাপার আকবর সাহেবের মনে ধরল। তাঁর নিজেরও একটা ছেলে আছে, ৫ বছর বয়স। কাজের চাপে ছেলেটার আসলেই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। ছেলেটা নাকি এমনিতে কিছুই খেতে চায় না, কেমন রোগা আর শুকনা হয়ে যাচ্ছে। হরলিক্সটা ফেরত না দিয়ে তাঁর ছেলের জন্য রেখে দেওয়া যায়।
২।
দুই মাস পরের কথা। আকবর সাহেব অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন, শাহানা এসে দাঁড়ালো।
দেখো তো ফেরার পথে হরলিক্সটা আবার আনতে পারো কিনা। এই জিনিস খেয়ে তো রুদ্রের খাওয়ার রুচি ফিরেছে। সত্যি বলতে কি, হরলিক্সটার পুরাপুরি ডিফারেন্ট স্বাদ, খুললে বেলি ফুলের মতো একটা গন্ধ বের হয়। ছেলের দিকে তো একবার তাকানরও সময় হয় না, শুধু কাজ আর কাজ। একবার দেখেছ ছেলেকে?
আকবর সাহেব লজ্জা পেলেন। আসলেই অনেক চাপ সেই সাতটায় বাসা থেকে বের হন, ফিরেন রাত ১১টায়। ছেলেটার সাথে একবারও দেখা করা হয় না।
আকবর সাহেব রুদ্রের বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। দাড়িয়ে ছোট একটা ধাক্কার মতোও খেলেন। এই দুই মাসে রুদ্র বেশ খানিকটা লম্বা হয়েছে, প্রায় তিন ইঞ্চির মতো। তার রোগা পাতলা ভাবটা পুরাপুরি কেটে গেছে। চেহারায় অনেকটা গোলাপি আভার মতো চলে এসেছে।
হারলিক্সটা আসলেই কাজের। আজকে অফিস থেকে ফেরার পর খোঁজ করতে হবে।

৩।
এক সপ্তাহ পরের কথা।
আকবর সাহেব চিন্তায় অস্থির। বাজার থেকে নানান জাতের হরলিক্স আনা হয়েছে। ছেলে কোনটাই মুখে তুলছে না। আগের মতোই খাওয়া দাওয়া বন্ধ।
এই মুহূর্তে তিনি বসে আছেন হরলিক্সের কৌটাটা নিয়ে। সাধারণ একটা দেশি হরলিক্স, যেগুলো কিনে এনেছেন তার চেয়ে আলাদা কিছু না। হরলিক্স শেষ, কৌটা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে, বুঝতেও পারছেন না সেখানে কি ছিল।
এই সময় আবার বাসায় পিওন আসলো। সাথে আবার একটা চিঠি আর হরলিক্সের কৌটা।
চিঠিটা এরকমঃ
“সরি বাজান,
আসলেই একটু দেরি হয়ে গেলো। এলাকার অবস্থা ভালো না তো, সব দিক খেয়াল রাখা কঠিন। সবাই বলছে, দুর্ভিক্ষ লাগবে এবার।
রুদ্রের জন্য হরলিক্সটা পাঠালাম। ভালো করে খাওয়াবে। ও বাঁচলে, আমরা বাঁচব।
ইতি,
রহিমার মা।”
আকবর সাহেব এইবার বেশ চিন্তিত হলেন।
রহিমার মার গ্রাম্য উচ্চারণ কোথায় গেলো? ভাষা একেবারে শুদ্ধ হয়ে গেলো কিভাবে?
তার হাতের লেখা এই পরিমাণ চেঞ্জ কিভাবে হলো?
তার ঠিকানা মানিকগঞ্জ থেকে চেঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারি কিভাবে হলো?
তাঁর ছেলের নাম সে জানলো কিভাবে?
সবচেয়ে বড় কথা, কে এই রহিমার মা?
(চলবে)