১।
বৈশাখ মাস। টাঙ্গুয়ার হাওড়। মিডিয়াম সাইজের একটা ট্রলার। তাতে আমরা কয়েকজন।
সারাদিন বারবার ঝড় হয়েছে, বিদ্যুতের শিখার দমকে কেঁপে উঠেছে আমাদের নৌকা। ছইয়ের ভেতরের টিমটিমে লন্ঠনের আলোয় তাস খেলেছে ওরা তখন। বিকালে মেঘ কেটে গেলো, হাওড়ের বুক আলো করে উঠল হলুদ রঙের একটা পূর্ণিমার চাঁদ। তার ভরা জোছনার আলোয় থই থই করলো হাওড়ের কালো পানি। নৌকার ছাদে উঠে আসলাম আমরা। জমে উঠলো ভুতের গল্প।
আমাদের মধ্যে মকবুল (আসল নাম ইউজ হবে না) ছিল একটু হুজুর টাইপের। অনেক রকম জিন ভুতের গল্প তার ঝুলিতে আছে। আছে আত্মার গল্প, প্ল্যানচেটের গল্প, কিভাবে তার বোন নিষিদ্ধ এই আত্মা ডেকে আনার কাজ করে এমন এক ভয়ঙ্কর গ্রুপের সাথে জড়িয়ে যায় তার গল্প। মকবুলের গল্পগুলো লিখতে গেলে আসতো একটা বই বই হয়ে যাবে, ওর গল্পগুলো আরেকদিন বলব। মকবুলের গল্প শেষ হলে গল্প ধরল মিরপুরের আহাদ। ওর ঝুলিতে ছিল একটাই গল্প। আজকের টপিক ওই গল্পটা।
আহাদরা ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে মিরপুরের কলোনিতে। কলোনির বাসাগুলো ফাঁকা ফাঁকা, মাঝখানে অনেক গাছপালা। আহাদ তখন ক্লাস 6 কি 7এ পরে। কলোনির রাত, চারদিক নিশ্চুপ তখন। আহাদ একা তার রুমে মশারির নিয়ে শুয়ে শুয়ে তিন গোয়েন্দা পড়ছে। টিউব লাইটের মিটিমিটি আলো অদ্ভুত আলো আঁধারি তৈরি করেছে রুমে।
আহাদ চোখের কোন দিয়ে একটা নড়াচড়া দেখল। ঘরের ডান দিকে একটা দরজা, পর্দাটা কেঁপে উঠল হঠাত করে। আহাদ পাত্তা না দিয়ে আবার পড়ায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পরের কথা। ২টা রোমশ হাত মশারির উপর দিয়ে আহাদকে চেপে ধরল। একটা হাত থাকলো তার কপালে। আরেকটা হাত তার কাঁধে। যে অ্যাঙ্গেল থেকে চেপে ধরেছে তাতে শুধু তার পেটের দিকটা দেখা সম্ভব ছিল তার।
আহাদের মনে আছে কালো কালো লোমের কথা, ৪০-৫০ সেকেন্ড অমানুষিক আতংকের কথা। বিছানা শরীর থরথর করে কাঁপছিল তখন। এই পুরো সময়টা সে ফ্রিজ হয়ে ছিল। তারপর আহাদ অমানুষিক একটা চিৎকার দেয়, আঙ্কেল আন্টি ছুটে আসে রুমে। আহাদের পাশে কেউ নেই তখন।
যে রোমশ প্রাণীটা আহাদের ঘাড় চেপে ধরেছিল আহাদ তার মুখ একবারও দেখে নি। সেই জোছনা রাতে আহাদ যদি এতোগুলো মানুষের সামনে বানিয়ে বানিয়ে গল্পটা বলে তাহলে আহাদ পাকা অভিনেতা। আহাদকে সেরকম মনে হয় নি কখনো। গল্পটা শুনে হুমায়ুন সাথে সাথে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছিল, পরে সারারাত ঘুমাতে পারে নি, নিজের কাঁধ চেপে ধরে জেগে উঠেছিল বারবার।
এই গল্প এখানেই শেষ করে দিলে ভালো হতো, আমি সেটা করবো না। মিসির আলির মতো ভিতরে ঢুকে দেখবো সেরাতে আসলে কি হয়েছিলো। চলুন শুরু করা যাক।
২।
মিরপুর এলাকায় বানরের উৎপাত কিরকম আহাদকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে বলল, এতো জোরে চেপে ধরেছিল, সে থরথর করে কাঁপছিল, নড়তে পারছিল না। বানরের এতো শক্তি থাকার কথা না।
আমাদের অন্য ব্যাখ্যায় যেতে হবে।
৩।
শ্রিজোফ্রেনিয়া অদ্ভুত পরিবর্তন করে মানুষের ব্রেইনে, কর্টেক্সের কনশাসনেসের জায়গাটা উলটে পালটে যায় তখন। আমার এক মামার শ্রিজোফ্রেনিয়া আছে। তিনি দেখেন গুণ্ডারা তাঁকে আর তাঁর মাকে মারতে আসছে। শ্রিজোফ্রেনিয়া ব্রেইনে চেঞ্জ করে, আপনাকে যা দেখাচ্ছে তা আপনি না দেখতে পারবেন না কখনো। শ্রিজোফ্রেনিয়া মানে পাগল না, কিন্তু এই রোগ মানুষকে পাগল করে তোলে। প্রবল বুদ্ধিমান নোবেল বিজয়ী জন ন্যাশের এই রোগ ছিল, পরে তিনি বুঝতে শিখেছিলেন যা দেখছেন তা সত্যি না। সব মানুষ সেটা পারে না।
শ্রিজোফ্রেনিয়ার কোন পারফেক্ট চিকিৎসা আছে বলে আমার জানা নেই। আমার মামাকে নিয়ে তাঁর মা সাড়া জীবন স্টাগল করে যাচ্ছেন, শ্রিজোফ্রেনিয়া এই ২টা মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আহাদের ডেফিনিটলি শ্রিজোফ্রেনিয়া ছিল না, থাকলে সে এতো সহজে ভালো হতো না।
৪।
সাবসনিক শব্দ অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া করে মানুষের মনে, আস্তে আস্তে অস্বস্তি, তারপর কেউ তাকিয়ে আছে এরকম ফিলিং শুরু হয়। তারপর তীব্র আতঙ্ক গ্রাস করে তাকে। কাছাকাছি ইফেক্ট আনে অস্বাভাবিক ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজম। কর্টেক্সের নির্দিষ্ট জায়গায় স্টিমুলেশন দিয়ে আপনাকে ভুত দেখানো সম্ভব।
অনেক ভুতের বাড়ির ঘটনা সাবসনিক শব্দ আর ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে যেসব জায়গায়
সাবসনিক শব্দের সোর্স থাকে সেখানে ঘটনা বারবার ঘটে। মিরপুরের ওই কলোনিতে কতবার ভুত এসেছিল আমার জানা নেই। আহাদের একবারের কথাই মনে আছে।
৫।
কনশাসনেসের তৃতীয় পর্বে স্লিপ প্যারালাইসিসের কথা বলেছি। স্লিপ প্যারালাইসিস আতংকের এক ছদ্মনাম। আপনি হঠাত ঘুম থেকে জেগে উঠে গেখবেন আপনি আর এক চুলও নড়তে পারছেন না। আপনি সব দেখছেন, সব শুনছেন কিচ্ছু করতে পারছেন না। এই অভাবনীয় আতঙ্কের সময় ব্রেইন আপনাকে বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝামাঝি নিয়ে যায়। আপনি Augmented Reality দেখেন। আপনি আপনার ঘরটা দেখবেন, ওইটা সত্যি। ঘরের মাঝখানে যে এলিয়েনটা দাড়িয়ে আছে সে সত্যি না। সে আপনার মূর্ত আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ। এলিয়েন আবডাকশনের শিকার অনেক সাবজেক্ট স্লিপ প্যারালাইসিসের কথা স্বীকার কছেন।
আহাদের স্লিপ প্যারালাইসিস ছিল। এই ঘটনার সবচেয়ে লজিক্যাল ব্যাখ্যা হতে পারে স্লিপ প্যারালাইসিস। তিন গোয়েন্দা পড়তে পড়তে সে হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিল, তারপর চেপে বসে ঘুমের দানব। আধো ঘুম আধো জাগরণে তার ব্রেইন হয়তো তাকে কিছু একটা দেখায়। পরে সত্যি স্মৃতি মিথ্যা স্মৃতি এক হয়ে আরও অনেক ডিটেইল যোগ হয় কাহিনীতে।

৬।
সব শেষে আরেকটা ব্যাখ্যা কিন্তু সব সময়ই থাকে। অন্ধকার নিশুতি রাতে পর্দা ফাঁক করে সেদিন ঘরে ধুঁকেছিল অন্য জগতের কোন অজানা প্রাণী, আসলেই ঘাড় চেপে ধরেছিল ক্লাস 6 এ পড়া আহাদের।
রহস্যময় এ পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। যে বিজ্ঞান কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে মেনে নিতে পারে সে যথেষ্টই ওপেন মাইন্ডেড। বিজ্ঞান বিশ্বাসের ধার ধারে না। প্রমাণ চাই তার।
Tamjid Rana
হুমম।পড়লাম। 🤨
Shadhin
Nayem vai😶. sleeping paralysis thik kora jai kivbe.