১।
খুব ছোটবেলার কথা। বয়স ৩ বছরের মত হবে।
তখন রংপুরে থাকি। কোন এক কারণে ওইদিন রাতে ঘর ফাঁকা, সবাই কোথাও বেড়াতে গেছে। আমি ড্রইংরুমে একা।
ড্রইংরুমের দেওয়াল প্রজাপতির মত দেখতে কিন্তু অনেক বড় বড় পোকায় ভরে গেছে, আমি অবাক হয়ে পোকার উড়াউড়ি দেখছি। একটু পরে কাজের মেয়েটা ঘরে ঢুকল, তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এটা কি পোকা? সে বলল, এর নাম সুজুকি পোকা।
এই সুজুকি পোকার স্মৃতি আমার বেশ কয়েকবার আছে। ছোটবেলায় ব্যাপারটা এতো স্বাভাবিক মনে হয়েছে কখনো প্রশ্ন জাগে নি এতোগুলো বিরাট বিরাট প্রজাপতির মতো পোকা পুরো দেওয়াল ছেয়ে ফেলাটা ঠিক নরমাল না। আসলেই কি তারা পুরো দেওয়াল জুরে থাকতো নাকি ২-৪টা পোকার স্মৃতি বড় হয়ে এই জিনিস মনে হচ্ছে?
সুজুকি নামের কোন পোকা আসলে কি আছে?
২।
ধানমন্ডি। খালার বাসা। তখন বয়স মে বি ৫ বছর। কাজিনরা এসেছে, লুকোচুরি খেলছি।
খালার বাসা ছিল বিরাট বড়। আর সেই সময় ধানমন্ডির বাসাগুলো ছিল অনেক ফাঁকা ফাঁকা। বাসার পাসে গাছপালা, ফাঁকা মাঠ তারপর আরেকটা বাসা।
জানালার পাশে ডাইনিং রুমে একটা কাপড় রাখার ঝুরি ছিল, বেশ বড়। ছোট একটা ছেলে আস্ত ঢুকে যেতে পারতো। ওইটার মধ্যে ঢুকে ছিলাম।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, কেউ খুঁজতে আসছে না দেখে নিজেই ঝুরি থেকে বের হলাম। রুম থেকে বের হওয়ার আগে কি মনে করে জানি ঘুরে তাকালাম।
জানালার পাশে, বড়সড় গাছটার ডালে কমলা রঙের কি জানি একটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।
আমি ঠিক ভুতে বিশ্বাসী মানুষ না, এই ঘটনার এক্সপ্লানেশন আমার কাছে আছে। আজকে বলতে ইচ্ছা করছে না।
৩।
৩ বছর বয়স। রংপুরের রাত। অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অনেকগুলো শিয়ালের ডাকে। দেখলাম আশেপাশে অনেক লোক টর্চ হাতে দরজার দিকে যাচ্ছে।
পাশে বড়রা ছিল, জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? ওরা বলল কিচ্ছু হয় নি, ঘুমাও, ওরা সবাই শিয়াল মারতে যাচ্ছে।
শীতের গভীর রাতে, টর্চ হাতে উঠে সবাই মিলে শিয়াল মারতে যাওয়া কতটুকু লজিক্যাল?
৪।
খুব ছোটবেলায়, ব্রেইন মাচিউরড হওয়ার আগে মানুষের ২ ধরনের স্মৃতি থাকে, সত্যি স্মৃতি আর মিথ্যা স্মৃতি। কোন একটা ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়তো স্মৃতির বীজ বপন হয়, সেটা ডালপালা ছড়িয়ে আসতে আসতে বিরাট একটা ঘটনার জন্ম দেয়।
ছোটবেলার এই মিথ্যা স্মৃতিগুলোর পেছনের আসল ঘটনা কি আমরা কোনোদিন জানতে পারবো?
