কোয়ান্টাম ৫
১।
পরমাণু খুবই ছোট।
এক চামচ কয়লাতে থাকে থাকে 6.02×10^23 টার মতো পরমাণু। খুবই খুবই বিশাল সংখ্যা।
এই মহাবিশ্বের বয়স তেরশো আশী কোটি বছর। 13.8×10^9 বছর। এক বছরে আছে ৩২ মিলিওন সেকেন্ড। এই তেরশ কোটি বছরে সেকেন্ডের কাটাটা টিক দিয়েছে প্রায় 4.3 × 10^17 বার।
ধরেন আপনার জন্ম বিগ ব্যাঙের সময়। আপনার একমাত্র কাজ একটা একটা করে কার্বন পরমাণু ওই এক চামচ কয়লা থেকে সরানো।
আপনি তেরশ আশি কোটি বছর আগে থেকে আজ পর্জন্ত, প্রতি সেকেন্ডে একটা করে পরমাণু সরাবেন। আপনার ঘুম নেই, খাওয়া নেই, প্রতি সেকেন্ডে একটা করে পরমাণু সরিয়ে যাবেন। এতো কিছু করেও, আপনি একটা ধূলির কণা পরিমাণ পরমাণুও এত বছরে সরাতে পারবেন না। একটা ধূলির কণা পরিমাণ পরমাণু সরাতে আপনাকে খাটতে হবে ১০০০০ বিগ ব্যাং পরিমাণ সময়।
এই অতি ক্ষুদ্র অতি রহস্যময় পরমাণুকে কোন আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায় না। ১৯৮১ সালে প্রথম স্ক্যানিং টানেলিং ইলেকট্রন মাইস্ক্রোপ বের হয়, এই যন্ত্র দিয়ে পরমাণুর ছবি তুলা যায়, আলো নয়, ইলেকট্রনের সাহায্যে। ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে যারা প্রথম পরমাণুর মডেল তৈরি করেছেন তারা কোনোদিন পরমাণু দেখেন নি।
এই তুখোড় বুদ্ধিমান মানুষগুলো সম্পূর্ণ না দেখে, শুধু কতগুলো ইন্ডিরেক্ট পরীক্ষা করে সেই যুগে পরমাণুর মডেল বের করেছেন। তাদের আমি সালাম জানাই।
পর্দা সরে গেছে। মঞ্চে আসছেন আর্নেস্ট ব্যারন রাদার্ফোর্ড অভ নেলসন। লর্ড রাদার্ফোর্ডের জন্য আমরা সবাই একটু উঠে দাড়াই!
২।
লর্ড রাদারফোর্ড ছিলেন খাঁটি পদার্থবিজ্ঞানি। তাঁর মতে, শুধু ফিজিক্সই হলো বিজ্ঞান, বাকি সব স্ট্যাম্প কালেকশন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাদারফোর্ড কয়েকদিন আগে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, ফিজিক্সে নয়, কেমিস্ট্রিতে। নোবেল পেয়েও তাঁর মন খুব একটা ভালো নেই।
এই মুহুর্তে রাদারফোর্ড খুব খুশি। টমসনের পরমাণু মডেলে একটা বিরাট বড় ভুল আছে, তিনি সেটা ধরতে পেরেছেন।
টমসন বলেছিলেন, পরমাণু পুডিং এর মতো। মাঝখানে কিছমিছের মতো ইলেকট্রন বসানো থাকে। রাদারফোর্ড কয়েকদিন আগে খুব পাতলা সোনার পাতের মধ্যে আলফা কণা ছুড়ে মেরেছেন। পরমাণু পুডিঙের মতো হলে সব আলফা কণা সমানভাবে সোনার পাত পার করে যেত। সেটা হয় নি। বেশিরভাগ কণা পার করে গেছে, খুব অল্প কিছু কণা ধাক্কা খেয়ে ফিরে এসেছে।
রাদারফোর্ড ভাবছেন। তাঁর চোখে বিদ্যুৎ ঝিলিক মারছে।
বেশিরভাগ কণা পাড় করে গেছে মানে, পরমাণু আসলে ফাঁকা।
খুব অল্প কিছু কণা ধাক্কা খেয়েছে, তারমানে পরমাণুর পুরো ভরটা খুব অল্প জায়গায় থাকে। টমসন অলরেডি জানিয়েছেন, ইলেকট্রনের ভর মোট ভরের তুলনায় খুবই অল্প।
ওই অল্প জায়গায় জড়ো হয়ে থাকা ভরটা তাহলে পজিটিভ জিনিসটার ভর।
ভারি জিনিস সবসময় কেন্দ্রে থাকবে। রাদারফোর্ড এর নাম দিলেন নিউক্লিয়াস।
কেন্দ্রে যদি একটা ভারি নিউক্লিয়াস থাকে, ইলেকট্রনকে অবশ্যই বাইরে থাকতে হবে। ইলেকট্রন চুপ করে বসে থাকলে কি হবে? নিউক্লিয়াস তাকে টেনে নামিয়ে ফেলবে। আর ইলেকট্রন যদি উলটা দিকে রওনা দেয়? তাহলে তো পরমাণুতে ইলেকট্রন থাকবেই না।
একটা মাত্র উপায়ে ইলেকট্রন থাকতে পারে পরমাণুতে। সেটা হলো গোল হয়ে ঘুরা। ঠিক যেভাবে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরে, সেভাবে।
৩।
রাদারফোর্ডের এই খুশি বেশিদিন থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর মডেলও বাতিল হইয়ে যাবে।
বিজ্ঞান পুরোপুরি ভুল হয় না সহজে। টমসনের মডেল বাতিল, কিন্তু ইলেকট্রন যে আলাদা একটা কণা এটা সত্যি।
রাদারফোর্ডের মডেল বাতিল, কিন্তু পরমাণুতে আসলেই একটা নিউক্লিয়াস আছে। চারপাশে আছে ইলেকট্রন।
রাদারফোর্ড হ্যাপি থাকতে থাকতে, আমরা আবার একটু পরমাণু দেখে আসি।
৪।
পরমাণু খুবই ছোট। এই অতি ক্ষুদ্র পরমাণুকে টেনে যদি আমরা একটা ফুটবল মাঠের মতো বড় করি, নিউক্লিয়াসটা হবে একটা মটরদানার মতো।
ইলেকট্রনের সাইজ কত হবে? রাদারফোর্ড জানতেন না। সত্যি কথা কি, আমরা এখনো জানি না। ২টা ইলেকট্রন কত কাছাকাছি আসতে পারে তার উপর একটা সাইজ চিন্তা করা হয়। কোয়ান্টাম থিওরির স্ট্যান্ডার্ড মডেল ইলেকট্রনকে পয়েন্ট পার্টিকেল মানে করে।
আসলেই পয়েন্ট পার্টকেল হলে, ইলেকট্রনের প্রকৃত সাইজ শুন্য।
মঞ্চে আসছেন নিলস বোর।
(চলবে)