ক্রেটাসিয়াস ১



ক্রেটাসিয়াস

১।
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ব্যাঙ্গর ব্যাঙ।
বিলজেবুফো ডাকছে। একটু আগে ডাইনোসরের বাচ্চার রান দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে সে। এখন মনের আনন্দে গান গাচ্ছে।

ক্রেটাসিয়াস হলো দানবদের যুগ। একগাদা ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বড় প্রাণীদের জায়গা হবে ক্রেটাসিয়াসে।
সবচেয়ে বড় ব্যাঙ কে? ক্রেটাসিয়াসের বিলজেবুফো।
সবচেয়ে বড় কুমির কে? ক্রেটাসিয়াসের সারকোসুচাস।

যাই হোক, বিলজেবুফোর কথায় আসি। বিলজেবুফো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে ডাকছিল, একটু পর কার জানি পায়ের নিচে পরে ভর্তা হয়ে গেল।
যে ভয়ঙ্কর প্রানিটা তাকে চাপা দিয়ে গেল তার তুলনায় সে একটা পিপড়ার চেয়ে ছোট।
সে আপনাকে আমাকে চাপা দিয়ে ভর্তা করতে পারবে।
একটা আফ্রিকান হাতিকেও ভর্তা করতে পারবে।
তার নামের সাথে ‘টাইটান’ আছে। একটা নীলতিমির চেয়েও লম্বা সে।
ডাইনোসর পাতাগোটাইটান ১৩০ ফুট লম্বা, সর্বকালের সবচেয়ে লম্বা প্রাণী। ওজন নীলতিমির চেয়ে কিছুটা কম।


বিজেলবুফো ভর্তা হওয়ার আগে অবশ্য অতটা খেয়াল করেনি। যে তাকে চাপা দিয়েছে সে পাতাগোটাইটান হতে পারে, আবার আরজেন্টিনোসরাস হতে পারে।
আর্জেন্টিনার আরজেন্টিনোসরাস লম্বায় সামান্য ছোট, ওজনে আরও অনেক ভারি। অন্য কেউ হলে দেখে চিন্তে পারত, বিলজেবুফো পারে নি। সে বায়োলজিতে খুব একটা ভাল না।

পাতাগোটাইটান এই মুহূর্তে বেশ বিরক্ত। বিলজেবুফোকে সে কেয়ারও করে না, কিন্তু তার মাথার কাছে যে চামচিকাগুলো বিরক্ত করছে সেগুলোকে কেয়ার না করলে চলে না। কত্ত বড় সাহস! টি রেক্স পাতাগোটাইটানের পায়ের কাছে ঘুরে, হাঁটুর সমান সাইজ, আর কতগুলো চামচিকা এসেছে তাকে বিরক্ত করতে!!

যে ‘চামচিকা’গুলো পাতাগোটাইটানকে কামড়ানর চেষ্টা করছে একেকটার সাইজ প্লেনের সমান। কম করে ৪০ ফুট চওড়া। এক কামড়ে একেকটা নাঈম এদের পেটে যায়। সাপের দেবী কোয়েটজালকোয়াটলের নামে এদের এদের নাম, বসে থাকলে একেকটা জিরাফের সমান সাইজের হয়। স্পিড ঘণ্টায় ৯০ কিলো। একটার পিঠে চড়ে বসলে সে আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবে ক্রেটাসিয়াসের দুনিয়া।

২।
লরেশিয়া আর গন্ডোয়ানা ভেঙ্গে গেছে, উত্তরে জন্মেছে উত্তর আমেরিকা আর ইউরেশিয়া, দক্ষিণে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা আর অ্যান্টার্কটিকা। অস্ট্রেলিয়া তখনো লেগে আছে অ্যান্টার্কটিকার সাথে, আর আফ্রিকা আর অ্যান্টার্কটিকার মাঝে সমুদ্রে ভাসছে ইন্ডিয়া। কোয়েটজালকোয়াটলের পিঠে চড়ে আমরা দেখে আসবো ওই অপরূপ রূপকথার রাজ্য।

সর্পদেবীর পিঠের সাথে আপনি বাঁধা। সে এখনো আপনাকে খেয়াল করে নি, তাই ভাগ্য ভালো। নিচের মাঠ ঘাট এক অবাস্তব দুনিয়া। কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে টিয়া পাখির মতো মাথা আর ডাইনোসরের শরীর ওয়ালা সিট্টাকোসরাস। কোথাও গায়ে মাথায় বিশাল বিশাল কাটা পরে বর্মওয়ালা সরোপেল্টা আর্মি ট্যাঙ্কের মতো জড়ো হচ্ছে।

ওই দেখেন। একঝাক ভেলোসির‍্যাপ্টর শিকারের পেছনে দৌড়াচ্ছে। জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের ব্লুর সাথে কোন মিল নেই এদের।  সাড়া শরীর মুরগির মতো পালকে ঢাকা। হাতের জায়গায় দুইটা ডানা। পেছনে পাখির মতো ঝলমলে একটা লেজ।

ওই দেখেন! ট্রাইসেরাটপ্সকে তাড়া করছে একটা টি রেক্স! আমেরিকান টাইরানসরাস রেক্স নিশসন্দেহে সবচেয়ে বিখ্যাত ডাইনোসর, এই পর্যন্ত একগাদা মুভিতে স্টার হয়েছে সে। অভিনয় ভালোই পারে।  টি রেক্স কিন্তু সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনো না, ওই রেকর্ড স্পাইনোসরাসের। টি রেক্স বিখ্যাত তার অসম্ভব শক্তিশালী চোয়ালদুটোর জন্য।

মানুষের বাইট ফোর্স ৭২০ নিউটন।
একটা বাঘের বাইট ফোর্স সাড়ে চার হাজার নিউটন। সে মানুষের মাথাকে ডিমের খোসার মতো গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
বর্তমান যুগের সবচেয়ে পাওয়ারফুল চোয়াল লোনাপানির কুমিরের। ১৬ হাজার নিউটন। মারাত্মক!
টি রেক্সের বাইট ফোর্স কত? ৪০ হাজার নিউটন। এই রেকর্ড মাটির প্রাণীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। টি রেক্সকে বেঁচে থাকতে হয় ৩০ ফুট লম্বা বর্মওয়ালা ডাইনোসরদের খেয়ে খেয়ে, ওই বাইট ফোর্স তার দরকার আছে। টি রেক্সের ওই চোয়ালটার নাম দেওয়া হয়েছে বোন ক্রাশার।

এই টি রেক্সটার ভাগ্য ভালো না। সে পানির বেশি কাছাকাছি চলে এসেছিল। ৪০ ফুট লম্বা দানব কুমির ডেইনসুচাসের বাইট ফোর্স ১ লাখ ২ হাজার  নিউটন। সে টি রেক্সের মাথাটা ডিমের খোসার মতো ভাঙতে পারে।

সবচেয়ে বেশি বাইট ফোর্স তাহলে কার? ওই গল্প হবে সিনোজইক  পর্বে।
ক্রেটাসিয়াস সামনের পর্বে শেষ হবে।

2 thoughts on “ক্রেটাসিয়াস ১”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *